রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মিয়ানমারে বিস্ফোরণে মুহুর্মুহু শব্দ, টেকনাফের বসত ঘরের আঙ্গিনায় এসে পড়েছে গুলি মাকে কুপিয়ে হত্যার পর থানা এসে হাজির যুবক টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ

ধর্ম যাদের এক হতে দেয়নি

বিডিনিউজ: শাহরুখ-গৌরী কিংবা সাইফ আলি খান-কারিনা কাপুরের মতো ভাগ্য সহায় হয়নি দেব আনন্দ-সুরাইয়ার। দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষ হওয়ায় তাদের জীবন নদী মিলতে পারেনি সুখের মোহনায়। হিন্দি সিনেমার স্বর্ণ যুগের এই দুই তারকার প্রেমকাহিনি হার মানায় সিনেমাকেও।

দেব আনন্দ এক সময় সুরাইয়াকে বলেছিলেন, “পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম হলো প্রেম। সামাজিক কিংবা পারিবারিক বাধাকে তোমার হৃদয়ের ওপর স্থান দিও না।” কিন্তু সুরাইয়া শেষ পর্যন্ত সব বাধা পার হয়ে মনের মানুষকে বিয়ে করতে পারেননি। এই সিদ্ধান্ত না নিতে পারার যন্ত্রণায় সুরাইয়া সারা জীবন অনুতাপ করেছেন।

সুরাইয়ার পুরো নাম সুরাইয়া জামাল শেখ। ১৯২৯ সালের ১৫ই জুন লাহোরে তার জন্ম। খুব কম বয়সেই চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। চল্লিশের দশকে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নায়িকা এবং গায়িকা হিসেবে ছিলেন অসামান্য। সম্মান করে তাকে বলা হতো মালিকা-এ-তারান্নুম। পরে এই উপাধি পেয়েছিলেন নূরজাহান। হিন্দি ও উর্দু ছবিতে সমান জনপ্রিয় সুরাইয়ার পরিচয় হয় নবাগত নায়ক দেব আনন্দের সাথে। পরিচয় পর্বটি বেশ নাটকীয়। বোম্বে থেকে ট্রেনে পুনা যাচ্ছিলেন দেব। তার সঙ্গে একই কামরায় ওঠেন সুরাইয়া। দেব মুগ্ধ হন তার অসাধারণ রূপ ও কণ্ঠে। পরে কাজের সূত্রে আলাপ জমে ওঠে তাদের। চলচ্চিত্রে সংলাপ বলার সময় নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতেন তারা। অভিনয়ের ছলে ভালোবাসার আলাপন চলতো তাদের।

দেবের জন্ম ১৯২৩ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবে। সুদর্শন দেব ছিলেন প্রাণচঞ্চল। আর সুরাইয়া ছিলেন কাব্যিক মেজাজের, শান্ত স্বভাবের। খ্যাতির শিখরে থাকা সত্ত্বেও নবাগতদের প্রতি ছিলেন সহানুভূতিশীল। অনেক নবাগতের সঙ্গে অভিনয় করেছেন এবং তাদের অভিনয়ে সাহায্য করেছেন সুরাইয়া।

দেব-সুরাইয়া জুটির সাতটি ছবি মুক্তি পায়। ‘বিদ্যা’(১৯৪৮), ‘জিত’(১৯৪৯) এবং ‘শায়ের’(১৯৪৯) সুপারহিট হয়। তখনও কেউ সন্দেহ করেনি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে এই জুটি। কিন্তু ‘আফসার’ (১৯৫০) ছবির সেটে অনেকেরই নজরে পড়ে যান তারা। সংগীত পরিচালক এস মাহিন্দর একময় বলেছিলেন, সুরাইয়া ও দেব আনন্দের মধ্যে যে প্রেম চলছে তা ‘আফসার’ ছবির সেটেই প্রথম ধরা পড়ে তার চোখে। তারা মাঝে মধ্যে হাওয়া হয়ে যেতেন কিংবা স্টুডিওর ভেতরেই খুঁজে নিতেন নিরালা কোনো জায়গা। প্রেমের ইতিবাচক ছাপ পড়ে দুজনের ওপরেই। দেবের অভিনয়ে পরিপক্কতা আসে। সুরাইয়ার কণ্ঠে দেখা দেয় নতুন মাধুর্য। সুরাইয়া ছিলেন গ্রেগরি পেকের ভক্ত। দেব তাই অভিনয়ের জন্য গ্রেগরি পেকের ধরন অনুসরণ করতেন। সিনেমার শুটিংয়ে যখন তারা প্রেমের অভিনয় করতেন তখন ইউনিটের সকলেই টের পেতো তাদের ভালোবাসা।

সুরাইয়ার মামা এই প্রেমের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু সুরাইয়ার নানী দারুণ ক্ষেপে ওঠেন হিন্দু যুবকের সঙ্গে এই প্রেমের ঘটনায়। এদিকে মুক্তি পেল আরও তিনটি ছবি। ‘নিলি’, ‘দো সিতারে’, ‘সানাম’। দেব আনন্দের সঙ্গে নাতনির মেলামেশা বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগেন নানী। দুজনের একসঙ্গে সিনেমা করা বন্ধ করলেন তিনি। লুকিয়ে টেলিফোনে কথা বলতেন তারা। একদিন সেটিও বন্ধ হয়ে গেল । দেব তার আত্মজীবনী ‘রোমান্সিং উইথ লাইফ’-এ লিখেছেন কিভাবে একদিন ফোনে কথা বলার সময় সুরাইয়ার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেন তার নানী। ধর্মের বাধা অতিক্রম করে সুরাইয়াকে বিয়ে করতে চান দেব। সুরাইয়ার মা কিছুটা রাজিও হয়েছিলেন কিন্তু কিছুতেই রাজি হলেন না নানী। আর সুরাইয়াও পরিবারের অমতে বিয়ে করতে সাহস পেলেন না।

শেষ বারের মতো তাদের দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন সুরাইয়ার মা। দেব ভাবলেন এটা কোনো চাল নয়তো? এক পুলিশ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন সুরাইয়াদের বাড়িতে। পাইপ বেয়ে উঠলেন ছাদে। সন্ধ্যার অন্ধকারে পানির ট্যাংকের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুরাইয়া। অশ্রু ভেজা চোখে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন তারা। সেই সন্ধ্যায় চিরদিনের মতো বিদায় নিলেন তারা একে অপরের কাছ থেকে।

দেব আনন্দ এই আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারলেও পারেননি সুরাইয়া। দেবের ক্যারিয়ার এরপর পুরো গতিতে চলেছে সামনের দিকে। সুরাইয়া এর পর কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগত ছেড়ে দেন। ১৯৬৩ সালের পর আর কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি তিনি। দেব পরবর্তীতে বিয়ে করেন ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ সিনেমায় তার সহঅভিনেত্রী কল্পনা কার্তিককে। তার আসল নাম ছিল মোনা। ঝোঁকের মাথায় মোনাকে বিয়ে করলেও দেবের দাম্পত্যজীবন খুব একটা সুখের হয়নি। সুরাইয়ার প্রতি প্রেমই তার প্রধান কারণ। নামকরা নায়ক, নির্মাতা দেবের জীবনে সুন্দরী নায়িকার আনাগোনা কম ছিল না। তার হাত ধরে চলচ্চিত্রে পা রেখেছেন জিনাত আমান, হেমা মালিনির মতো সুন্দরীরা। কিন্তু সুরাইয়াকে তিনি কখনোই ভুলতে পারেননি। এক ছাদের নিচে বসবাস করলেও মোনার সঙ্গে তেমন ঘনিষ্টতা তার কখনও হয়নি।

অন্যদিকে সুরাইয়া অবিবাহিত ছিলেন সারা জীবন। মা, বাবা, নানীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি। তার আত্মীয়রা ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। বোম্বেতে রয়ে যান শুধু সুরাইয়া। ছিলেন খুব নিভৃতচারী। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানে যেতেন না। গানের জগতও ত্যাগ করেন। সত্তরের দশকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দেবকে প্রত্যাখ্যান করা ছিল তার জীবনের চরম ভুল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই ভুলের জন্য অনুতাপ করতে হবে তাকে। ২০০৪ সালের ৩১শে জানুয়ারি মৃত্যু হয় সুরাইয়ার।

চলচ্চিত্রে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষে ২০১১ সালের ৩রা ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন দেব আনন্দ। দেব আনন্দ-সুরাইয়ার প্রেমকাহিনি এখনও হিন্দি সিনেপাড়ায় বিষাদময় হয়ে গাঁথা হয়ে রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888